ঢাকায় রেহাই পাচ্ছেন না নারীরাও গণহারে গ্রেফতার

ঢাকায় রেহাই পাচ্ছেন না নারীরাও

গণহারে গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ ডিসেম্বর ২০১৩, শনিবার, ১০:৪৭
নয়াদিগন্ত
গণহারে গ্রেফতার অভিযান চলছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নারীরাও। রাজধানীতে এক বিএনপি নেতাকে বাসায় না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই বাসা থেকে মহিলাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ তাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও নাজেহাল করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযানে বাসাবাড়িতে তল্লাশির নামে ভাঙচুর ও হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সাথে ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন সারা দেশ। নৌপথ, রেলপথ ও সড়কপথে কাউকেই ঢাকায় আসতে দেয়া হচ্ছে না। গতকাল দুপুরের পর থেকে দূরপাল্লার যানবাহন ঢাকায় আসতে দেয়া হচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতাকে না পেয়ে বোন, ভাবী ও ভাতিজি আটক : জাতীয়তাবাদী যুবদল উত্তরের সভাপতি মামুন হাসানের মিরপুরের বাসায় অভিযান চালিয়েছে যৌথবাহিনী। এ সময় তাকে না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বোন, ভাবী ও ভাতিজিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের থানায় রাখা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। শুক্রবার ভোরে যুবদল নেতা মামুনের মিরপুরের ৯০৪/১ মধ্য মনিপুরের বাসায় অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তবে মামুন ওই সময় বাসায় ছিলেন না।
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আল মামুন জানান, ভোর রাতে মামুনকে আটক করতে তার বাসায় অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাসার জিনিসপত্র তছনছ করে। মামুনকে না পেয়ে তার বোন, ভাবী ও ভাতিজিকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় মামুনের ব্যবহৃত ল্যাপটপও তারা নিয়ে যায়। 
মিরপুর মডেল থানার ওসি অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, মামুনের বোন, ভাবী ও ভাতিজি বর্তমানে থানায় আছেন। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকে ঢাকায় গণজমায়েত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক শ’ লোককে আটক করা হয়েছে।
তালিকা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরের কল্যাণপুর, দারুস সালাম, রূপনগর, সেনপাড়া, পল্লবী, কাফরুলসহ বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এর মধ্যে কল্যাণপুরের শামীম কমিশনারের বাড়ি ও মনিপুরের সেনপাড়ায় বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাত ২টায় রাজধানীর কল্যাণপুরের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এবং স্থানীয় বিএনপি নেতা শামীম পারভেজের বাসায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে যৌথবাহিনী। এ সময় কল্যাণপুরের শহীদ মিনার রোডের ওই বাসায় কমিশনার পারভেজকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে আটক করে নিয়ে যায় যৌথবাহিনী।
সূত্র জানায়, শুক্রবার বেলা ১১টার সময় ঢাকা মহানগরীর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুল রশিদ আনজুর বাসায় যৌথবাহিনী ব্যাপক তল্লাশি চালায়। তার পরিবারের অভিযোগ বজলুল রশিদকে বাসায় না পেয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করে। এতে পরিবারটির বেশ তি হয়েছে।
এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দীন জানান, এ অভিযান আমাদের রুটিনওয়ার্ক। এখানে কে কোন রাজনীতি করেন সেদিক বিবেচনা করা হচ্ছে না।
মহানগর পুলিশের মিরপুর জোনের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, রাতভর অভিযানে মিরপুরের সব থানা এলাকা থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করা হবে। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কিছু তালিকাভুক্ত রয়েছে। 
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, ডেমরা, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, ওয়ারী, বংশাল, কোতোয়ালি, চকবাজার, লালবাগ, হাজারিবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। র‌্যাব, বিজিবি, ডিবি ও ইউনিফর্মধারী পুলিশ এই যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। 
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ার ১২ থানায় যৌথবাহিনীর অভিযানে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মী মনে করে আটক করা হয়। 
পুলিশ জানায়, সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলার ১২ থানায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই।
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিএনপির আটজন, জামায়াতের ১০ জন ও ছাত্রশিবিরের ১৭ জন নেতাকর্মী রয়েছেন। তবে তাদের পরিচয় জানায়নি জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ক। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত যৌথবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।
জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ক থেকে জানা গেছে, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা থেকে এক শিবির নেতা, বুড়িচং উপজেলা থেকে এক বিএনপি নেতা, দেবিদ্বার উপজেলা থেকে এক জামায়াত নেতা, চান্দিনা উপজেলা থেকে দুই জামায়াত ও এক শিবির নেতা, নাঙ্গলকোট উপজেলা থেকে এক জামায়াত নেতা, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে এক শিবির নেতা ও তিন বিএনপি কর্মী, লাকসাম উপজেলা থেকে ৯ শিবির নেতা ও তিন জামায়াত নেতাকর্মী, সদর উপজেলা থেকে দুই শিবির নেতা ও দুই বিএনপি কর্মী, মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে তিন শিবির নেতাকর্মী, বরুড়া উপজেলা থেকে দুই জামায়াত নেতা এবং মুরাদনগর উপজেলা থেকে দুই বিএনপি নেতা ও এক জামায়াত নেতাকে আটক করা হয়েছে।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ২৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে বিএনপির ১৮ ও জামায়াতের ১১ জন নেতাকর্মী রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা জেলার নয় উপজেলায় বিশেষ অভিযানে ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুলনা জেলা পুলিশ সুপার গোলাম রউফ খান বলেন, গত সোমবার রাত থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত জেলার নয় থানায় ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে বটিয়াঘাটা থানায় আটজন, রূপসা থানায় তিনজন, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, দাকোপ, দিঘলিয়া ও পাইকগাছা থানায় দু’জন করে, কয়রা ও ফুলতলা থানায় একজন করে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি বলে ডিএসবি সূত্র জানায়। ডুমুরিয়া থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার খর্নিয়া এলাকা থেকে কামাল ফকির নামে এক ছাত্রশিবির নেতাকে গ্রেফতার করেছে।
লাকসাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, লাকসামে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশ ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যানসহ জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। অপর দিকে ইউএনও কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় অফিস সহকারী আবদুল লতিফ পাটোয়ারী বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে লাকসাম থানায় মামলা করেছেন। আটককৃতদের ওই মামলায় গ্রেফতাার দেখিয়ে কুমিল্লা আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেনÑ জামায়াত নেতা পেরুল দক্ষিণ ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুদ্দীন (৩৯), ডা: কবির হোসেন (৩৩), আবদুল জলিল (৪৯), মাসুদ আলম (৩৫), মোস্তফা কামাল (৫৪), শিবিরের রাজু আহমেদ (২০), সাইফুল ইসলাম (১৮), আবু সাকিব (২৯), রুহুল আমিন অপু (১৮), ফরহাদ হোসেন (১৯), কামাল হোসেন (২৩) ও জামাল হোসেন (১৮)।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : কয়েক দিন ধরেই উপজেলার মানুষের মধ্যে যৌথবাহিনীর অভিযান আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলার অসংখ্য গ্রামের পুরুষ এই অভিযানের ভয়ে রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। আটক এড়াতে অনেক ধর্মপ্রাণ যুবক দাড়ি কেটে টুপি-পাঞ্জাবি পরা ছেড়ে দিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে যৌথবাহিনী উল্লাপাড়া উপজেলার বাঁখুয়া গ্রামে প্রথম অভিযান শুরু করে। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালানোর পর গ্রামটি এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের মহিলা শিশু-কিশোরদের সময় কাটছে চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায়। যৌথবাহিনীর অভিযানে এই গ্রাম থেকে ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানকালে অনেক বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়।
ওই অভিযানে অংশ নেয়া উল্লাপাড়া থানার উপপরিদর্শক আব্দুল জলিল জানান, বাড়ির আসবাবপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে যৌথবাহিনীর কোনো সদস্য ভাঙচুর করেনি। তবে তল্লাশি চালানোর সময় দু-একটি আসবাবপত্র ভেঙে থাকতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন। 
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) : ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ গত দুই দিনে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করেছে। একই সাথে ব্যাপক তল্লাশি চলছে যানবাহনেও। এতে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে ১৮ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, জেলা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় ধানুয়া জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হেলাল উদ্দিন, ধানুয়া গ্রামের মুন্সী মুজিবুর রহমান ও তোফাজ্জল হোসেন শাকিল, চালিয়াপাড়ার সারোয়ার হোসেন, মনতলার নুরুল ইসলাম কাজী, গজারিয়ার জসীম উদ্দিন ও সিরাজুল ইসলাম। তারা সবাই বিএনপি ও জামায়াতের কর্মী ও সমর্থক বলে জানা গেছে। 
সাভার (ঢাকা) : সাভার পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট : শুক্রবার রাতে জেলার পাটগ্রাম থানা পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে দুই জামায়াত, বিএনপি-ছাত্রদলের দু’জন রয়েছে। জামায়াত কর্মীরা হলেন, আব্দুল জব্বার ও ওফিযার রহমান এবং বিএনপির হাফিজ উদ্দিন ও ছাত্রদল কর্মী মিজানুর রহমান। থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এ নিয়ে ৫৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।
লক্ষ্মীপুর ও কমলনগর : শুক্রবার ভোররাতে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে কমলনগর উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়ন জামায়াতের আমির ডা: মোসলেহ উদ্দিন ও সদর উপজেলার বাঙ্গা খাঁ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রহমান রায়হানসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত অন্য দু’জন হলেনÑ জামায়াত কর্মী মোরশেদ আলম ও শিবিরকর্মী সুমন। সদর থানার ওসি লোকমান হোসেন জানান, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এ দিকে রামগতি উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো: রাসেল জানান, নৈশকোচে ঢাকা যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব শিবিরের চার নেতাকর্মীকে আটক করে। তারা হলেনÑ ছাত্রশিবিরের রামগতি উপজেলা দক্ষিণ শাখার সভাপতি আ: রহমান, সেক্রেটারি আনছার আলী, সদস্য মোসলেহ উদ্দীন ও মো: জাফর। 
গাজীপুর: বিশেষ অভিযানে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।  পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগরের বাঘিয়া এলাকার বাড়ি থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: আজহারুল ইসলাম মোল্লাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি সাবেক কোনাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপি সিনিয়র সহসভাপতি ও গাজীপুর জেলা বিএনপির ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক। সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী এলাকায় ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর মামলায় তাকে আসামি করা হয়। 
জয়দেবপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মাহফুজুর রহমান জানান, ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি থাকায় মো: আজহারুল ইসলাম মোল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল এবং জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা এস এম ছানাউল্লাহসহ নেতৃবৃন্দ গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছেন এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। 
গাজীপুর জেলার ছয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা সদর জয়দেবপুর থানায় ১৮, টঙ্গী থানায় চার, কালিয়াকৈরে দুই ও কালীগঞ্জে দুইজন গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলার বাকি দুই থানা কাপাসিয়া ও শ্রীপুরে কোনো গ্রেফতার নেই।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের পাচাঁইখা এলাকা থেকে গতকাল শুক্রবার ছাত্রদলের দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন পাচাঁইখা গ্রামের এছাহাক মিয়ার ছেলে আল আমিন (২৩) ও মৃত কৃষ্ণ দাসের ছেলে শুভ (১৯)। পুলিশ জানায়, ভুলতা এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। 
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহম্মদ লালা বেপারীকে শুক্রবার দুপুরে চৌধুরী বাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মনিরুজ্জামান চৌধুরী থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহম্মদ লালা বেপারীকে গ্রেফতার কথা স্বীকার করে জানান, তার বিরুদ্ধে একটি মামলার এজাহারে নাম থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি কোন দলের সাথে জড়িত তা আমাদের (পুলিশের) জানা নেই। 
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৮ দলের আট কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, অভিযানে ১৮ দলের আট কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শোয়েব আহমদসহ ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: জাহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : গৌরনদীতে পুলিশ শ্রমিক দলের নেতা নাসির উদ্দিন সিকদারকে (৪২) গ্রেফতার করেছে। তাকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। 
গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম জানান, বুধবার রাত ৮টার দিকে বাটাজোর ইউনিয়নের শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন সিকদারকে থানার উপপরিদর্শক আলাউদ্দিন আটক করেন।
রংপুর : রংপুরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত যৌথবাহিনী বিএনপি-জামায়াতের পাঁচজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।  রংপুর পুলিশ কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, কোতোয়ালি থেকে বিএনপি নেতা মুশফিকুর রহমান সুমন, মিঠাপুকুর থেকে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান, আমিনুর রহমান, জামায়াত নেতা মোখলেছুর রহমান ও আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  জেলা গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের নামে মামলা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
দিনাজপুর : বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ দলীয় জোটের আট নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার রুহুল আমীন গ্রেফতারের খবরটি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
পুঠিয়া (রাজশাহী) : গতকাল শুক্রবার দুই ছাত্রদল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। তারা হলেন পুঠিয়ার বারইপাড়া গ্রামের ফরমান আলীর ছেলে সোহেল রানা (২৪) ও দোমাদি গ্রামের জেকের মণ্ডলের ছেলে জসিম উদ্দিন (২২)। বৃস্পতিবারও পুঠিয়ায় দুই ছাত্রদল কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন চারআনী বাজারের আলম খানের ছেলে মিলন (২৩) ও পোল্লা পুকুর এলাকার আবু শামার ছেলে জুয়েল রানা (২৪)। আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। 
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : গোপালপুরে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে গোপালপুর থানা পুলিশ উপজেলার সুতি এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ছয়জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে বলে জানা যায়। পরে তাদের টাঙ্গাইল আদলতে পাঠানো হয়। গোপালপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহবুব হোসেন এর সত্যতা স্বীকার করেন।
কেশবপুর (যশোর) : বৃহস্পতিবার রাতে থানা পুলিশ জামায়াতের কর্মী সোহরাব হোসেনকে (৩৫)  গ্রেফতার করে গতকাল জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে কেশবপুরে জামায়াত ও বিএনপির সমর্থক ছয়জন গ্রেফতার হয়েছে।
যশোর অফিস : যশোর শহর জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলকে যৌথবাহিনী গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার বিকেলে তাকে শহরের ঝুমঝুমপুরের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে জামায়াত সন্ধ্যায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।  পুলিশ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সারা দিনে ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির ১৪ জন ও জামায়াতের তিন নেতাকর্মী রয়েছেন। এ নিয়ে গত তিন দিনে বিশেষ অভিযানে ১৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হলো। 
সাতক্ষীরা : জেলার কলারোয়া থানা পুলিশ জামায়াত-শিবিরের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার মুরারীকাটি গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। কলারোয়া থানার এসআই হারাধন জানান, ২৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ মামলার এজাহারনামীয় আসামি জামায়াতকর্মী মশিয়ার মিস্ত্রি (৪৫), আজিজুল ইসলাম (৪০) ও শিবিরকর্মী মারুফ হোসেনকে (২১) তাদের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম : সীতাকুণ্ডে বৃহস্পতিবার রাতে যৌথবাহিনী বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ সোনাইছড়ি ইউনিয়ন জামায়াতের রুকন মো: নাছির উদ্দিন, একই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো: মুরাদ হাসান, শিবির সেক্রেটারি মো: লিটন, বিএনপিকর্মী মো: দিদারুল আলম ও ছমিলমপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি এ এস এম সায়েম।
এ দিকে সীতাকুণ্ডে কয়েক মাস ধরে গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর ও মহাসড়ক অবরোধ করে যে নাশকতাগুলো হয়েছে তাতে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা নেই বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন উপজেলা জামায়াতের আমির শফিকুল মাওলা।
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment