বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হতে পারে: টাইমস অব আসাম






বাংলাদেশে কমপক্ষে দু’টি গোয়েন্দা সংস্থা দেশটির ক্ষমতাসীন দলকে গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সংকটের কারণেই ঘটতে পারে এ গণঅভ্যুত্থান- এমনটাই সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতের আসামের দৈনিক টাইমস অব আসাম।

‘বাংলাদেশ রুলিং পার্টি ফেইলস ইন রিসলভিং ইলেক্ট্রিসিটি ক্রাইসিস’ শিরোনামে শুক্রবার প্রকাশিত সংবাদটিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত প্রায়।

এতে বলা হয়, ‘‘এ সংকট শুধু জনগণের জীবন বিপর্যস্ত করছে না দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একটি বা অনেকগুলো গণঅভ্যুত্থানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। চলমান বিদ্যুৎ সংকট থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না।’’

প্রতিবেদনটিতে বলা হয় ‘‘বিদ্যুৎ সংকটকে ইস্যু করে দেশটির বিরোধী দল সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করতে পারে। এবং নিঃসন্দেহে এতে বিপুল জনসমর্থন পাবে। বিরোধী দলকে সেই জনগোষ্ঠী সমর্থন করবে যারা ইতিমধ্যে সরকারের আচরণ নিয়ে হতাশ ও বিরক্ত।’’

ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘‘বিদ্যুৎ সংকটের করুণ দশা দেখে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ডক্টর তৌফিক-ই -এলাহি চৌধুরী ইতিমধ্যে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন। কোনো গণমাধ্যমের মুখোমুখিও হচ্ছেন না তিনি। নিজের ক্রমাগত ব্যর্থতা অনুধাবন করে বেশ মুষড়ে পড়েছেন তিনি। দেশের রাজনীতিতে এই ঘটনা বিশেষ প্রভাব ফেলবে।’’

প্রতিবেদনে বলা হয়, “এদিকে ক্ষমতাসীন দলকে কোণঠাসা করতে বিরোধী দল বিনএপি বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েই চলছে। অন্য বিরোধী দলগুলো দেশব্যাপী সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন।”

টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘‘বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতা ও জনগণের অর্থ লুট করে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নাম করে যে ছলনা করে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে জনগণকে।’’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল চলমান নানা সংকট ও অসুবিধা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করতে পারে দেশটির ভুক্তভোগী জনগণকে দিয়ে। সেক্ষেত্রে বিএনপি অর্থায়নও করতে পারে। এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আন্দোলনের জন্য এর চেয়ে উত্তম পন্থা বিরোধী দলের কাছে নেই। এ পদ্ধতি অনুসরণে করে ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারবে বিএনপি।’’

ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে এখন প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা বিদুৎ থাকে না। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো শোচনীয়। সেখানে বেশিরভাগ সময় ১৮-২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০১২ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে।’’

পত্রিকাটি লিখেছে, ‘‘ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পে আঘাত হেনেছে বিদ্যুৎ সংকট। এবং সকল ক্ষেত্রে জেনারেটর ও আইপিএস’র ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। ড্রাই-সেলের মাধ্যমে জেনারেটর চলে, এটি শুধু শব্দই উৎপাদন করে না ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণও করে, যা মানবদেহের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।’’

টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘‘বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে কয়েক ডজন বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে চুক্তি সাক্ষর করেছে, যারা কিনা এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। অথচ ২০১১ সালের আগস্ট মাসে নেয়া এই পরিকল্পনাগুলোও ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলেও এই পন্থা বেশ সমালোচিত হয়েছে। অনেকেই বলেছে, এটাকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের অর্থ আয়ের উপায় বলা যেতে পারে।’’

প্রতিবেদনে বলা হয়, “২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে দেশটির সরকার ক্র্যাশ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। লক্ষ্য ছিল একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট স্থাপন করা। প্রতি বছর যেটি সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ করবে। শুধু তাই নয় ৩৩টি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্যও বেসরকারি কোম্পানিদের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর করেছে। সে চুক্তির আওতায় বেসরকারি কোম্পানিদের উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সরকার নয় দশমিক ৭৫ টাকা থেকে ২২ টাকা হারে কিনে নেবে।”

টাইমস অব আসাম লিখেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি জানিয়েছে, চলমান বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্যই এসকল পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।এসব প্রজেক্টের কারণে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এই সকল প্রজেক্টের কারণে মেঘনা ঘাট থেকে ১০০ মেগাওয়াট, খুলনা থেকে ১১৫ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল থেকে ৭৮ দশমিক ৫ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জে (গ্যাস চালিত) ৮০ মেগাওয়াট, কেরানিগঞ্জ থেকে ১০০ মেগাওয়া্ট, আশুগঞ্জ ৫৩ মেগাওয়াট, নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট, আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট, জুলধা ১০০ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ ও কাটাখালি ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্রজেক্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গতি তরান্বিত হয়েছে। এটি দেশের সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


প্রতিবেদনে বলা হয়, “কিন্তু এই ধরণের তড়িৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না দেশটির বিশেষজ্ঞরা। বেশিরভাগ প্রকল্পেই পুরনো সেকেন্ড হ্যান্ড যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার বদলে সমস্যাই বেশি হবে। তারা যুক্তি দেখান যে এইসব প্রকল্প স্থাপন না করে সরকার বরং পুরনো প্রকল্পগুলোর অবস্থা উন্নয়ন করতে পারেন। কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে বদলে যেতে পারে চিত্রটি।”

টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘‘প্রতিমাসে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে সরকারি কোষাগার থেকে লুট করে নেয়া হচ্ছে কয়েশত মিলিয়ন ডলার। লুটকৃত অর্থের ঘাটতি পূরণ করতে সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বলা যায় বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের নামে জনগণের অর্থ কেড়ে নিচ্ছে সরকার। শুধু অবাধে অর্থ লুটে নেয়াই নয়, দেশের বাইরেও পাচার হয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ অর্থ।’’
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment